কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা হচ্ছে

কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করছে সরকার। যেসব স্কুলশিক্ষক কোচিং করাচ্ছেন তাঁদের তালিকা তৈরি করে 'কোচিং-বাণিজ্য' বন্ধ করা হবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে করণীয় নির্ধারণসংক্রান্ত সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, 'ক্লাসরুমে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া হলে কোচিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু একশ্রেণীর শিক্ষক কোচিংয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। আমাদের লক্ষ্য কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।'
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং-ব্যবসা বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক) এ কমিটির প্রধান হয়েছেন। অন্য সদস্যরা হলেন-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার একজন উপসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা। কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের বেঞ্চ এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ নভেম্বরের মধ্যে দেশের সব সরকারি ও এমপিওভুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধের জন্য পরিপত্র/নীতিমালা জারি করতে বলেন। তবে এ সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে মন্ত্রণালয় সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করে। আবেদনে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে নীতিমালা/পরিপত্র জারির উদ্যোগ নিয়েছে। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলুর দায়ের করা ওই মামলায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, শিক্ষাসচিবসহ ২০ জনকে বিবাদী করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, 'কোচিং নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না-হাইকোর্টের এমন রুলের জবাব দিতে মন্ত্রণালয় এ সভার আয়োজন করে। রুলে যাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে, তাদের নিয়েই আমরা বসেছিলাম।' গঠিত কমিটি কোচিংয়ে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা দেওয়ার পাশাপাশি কোচিং বন্ধেও সুপারিশ দেবে। এ সুপারিশের ভিত্তিতেই আদালতে জবাব দেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'কোচিং বন্ধে আমরা শুরু থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়েছি। তবে রাতারাতি তা হবে না। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য আমরা দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছি।' মন্ত্রী আরো বলেন, 'ক্লাসরুমে পূর্ণ শিক্ষা পেলে শিক্ষার্থীরা আর কোচিংয়ে যাবে না। এ ছাড়া অনেক শিক্ষক আর্থিক অসচ্ছলতার কথা বলেও কোচিং করিয়ে থাকেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষকদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেতন বাড়িয়েছি। ভবিষ্যতে আরো বাড়ানোর চেষ্টা করব।'
কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, 'আপনারা আদর্শ শিক্ষকদের অনুসরণ করুন। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা দিন।'
গতকালের বৈঠক শেষে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, কোচিং-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে। তিনি বলেন, 'সরকারি স্কুল-কলেজের যেসব শিক্ষক কোচিংয়ে জড়িত আছেন, তাঁদের বদলি করে দেওয়ার কথা বলেছি। আর বেসরকারি বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক কোচিং করাচ্ছেন, তাঁদের ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করতে গঠিত কমিটি সুপারিশমালা তৈরি করবে। এরপরই তাঁদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা (নায়েম) একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. শামসুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে। এ জন্য জনমত গড়ে তোলারও পরামর্শ দেন তিনি।
এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ১৭ বিধি অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না। কোনো সরকারি কর্মচারী এর ব্যত্যয় ঘটালে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবেন। আর বেসরকারি শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে কোচিংয়ের জন্য অভিভাবকদের নিরুৎসাহী করা, শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা দেওয়া এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত কমিয়ে ১ : ৩০ করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীর ফলাফল খারাপ হলে শ্রেণী-শিক্ষককে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। কোচিং সেন্টারগুলোর ব্যানার, লিফলেট, সাইনবোর্ড অপসারণ ও প্রচার বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Police Tel No.

Footer1

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা