লক্ষ্মীপুরে চরাঞ্চলের ৫ শতাধিক নারীর ভাগ্যবদল করছে ওমানী টুপি

চরাঞ্চলের নারীরা পরিবারের বোঝা কিংবা ঘরের রান্নার কাজে সীমাবদ্ধ নয়, তারাও কাজ করে হতদরিদ্র পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারে। দারিদ্রতাকে জয় করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এর প্রমাণ রেখেছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনার উপকূলীয় চরাঞ্চল মতিরহাট কোডেক কলোনী, চরজগবন্ধু, চরলরেন্স, কাদের পন্ডিত হাট এলাকার ৫ শতাধিক নারী। তারা ওমানি টুপি তৈরী করে পরিবারের দারিদ্রতা দূরীকরণে অবদান রেখেছে।

বর্তমানে ওই নারীদের হাতের অসাধারণ বুননে টুপি তৈরীর কাজ চলছে পুরোদমে। এখানে তৈরীকৃত টুপি ঢাকা-চট্রগ্রামে সরবরাহ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে রপ্তানী করা হচ্ছে। চরাঞ্চলের হতদরিদ্র নারীদের এ ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে স্থানীয় একদল যুবকের সংগঠন মেঘনা বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা।
সরকারী বা দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে এ পেশায় চরাঞ্চলের আরো বহু নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, উপজেলার কাদির পন্ডিতের হাটে স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোমী যুবক ২০০৪ সালের জুনে মেঘনা বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। পরে এই সংস্থার উদ্যোগে এলাকার হতদরিদ্র নারীদের দিয়ে ওমানী টুপি তৈরী এবং তা বাজারে বিক্রি শুরু করে। শুরুতে টুপি তৈরীতে ৫০/৬০ নারী কাজ করলেও বর্তমানে টুপি তৈরীর কাজে প্রায় হাজারো নারী জড়িত রয়েছে। তবে নিয়মিত কাজ করছে ৫ শতাধিকেরও বেশী নারী। তারাই পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে অবদান রাখছে। এ নারীদের অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য। কিছু রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ ছাত্রী। সংসারে কাজের ফাঁকে মহিলারা টুপির কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনছে। ছাত্রীরা লেখা-পড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে টুপি বুনিয়ে বাড়তি রোজগার করছে। এছাড়া এ সংস্থা হতদরিদ্র নারীদের দিয়ে জাল তৈরী, হাঁস মুরগী পালন, দাড়িপাতা তৈরীর কাজ করিয়ে বাজারে বিক্রী করছে।
চরজগবন্ধু এলাকার গৃহিনী শাহনাজ জানান, টুপিতে তাদের পুঁজি খাটাতে হয় না। সংস্থার লোকজন বাড়ীতে টুপির সরঞ্জাম দিয়ে যান। তারা শুধু তৈরী করেন। এ কাজ গ্রামের অন্য এক মহিলার কাছ থেকে কাজ শিখেছেন। তার স্বামী পেশায় জেলে। স্বামীর উপার্জন কম হওয়ায় সংসারের অভাব অনটন ছিল। বর্তমানে টুপি তার সংসারের দারিদ্রতা দূর করেছে। টুপি তৈরী করে মাসে ২-৩ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
কোডেক কলোনীর গৃহিণী নাজমা বেগম জানান, তার অভাব-অনটনের সংসারে স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে টুপি। টুপি তৈরী করে মাসে তিনি দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয় করছেন। মাসে তিনি ৫-৬টি টুপি তৈরী করতে পারেন। প্রতিটি টুপি সংস্থা ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকায় কিনে নিচ্ছে। স্বামীর উর্পাজনের পাশাপাশি তার আয় অভাবের সংসারে এনে দিয়েছে স্বচ্ছলতা। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে সুখে আছেন তিনি ।
কাদির পন্ডিতের হাট ইসলামিয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, দুই বছর পড়াশুনার পাশপাশি টুপি তৈরীর কাজ করে মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।
মেঘনা বহুমুখি উন্নয়ন সংস্থা’র সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন সবুজ জানান, টুপি তৈরীর সকল সরঞ্জাম সংস্থার মাঠকর্মীরা বিনামূল্যে নারীদের মাঝে সরবরাহ করে থাকে। নারীরা হাতের কারুকাজে টুপি তৈরী করে মাঠ কর্মীদের কাছে জমা দিয়ে প্রতিটি টুপি তৈরী বাবদ ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা পান। সংস্থা এ টুপি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা পাইকারী বিক্রি করে থাকে। আরএফএলডিসি প্রকল্পের মাধ্যমে এ সংস্থাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে ডানিডা। শুরুতে টুপি তৈরী, ডিজাইন মহিলাদের সংস্থার লোকজন শিখিয়ে দিলেও বর্তমানে মহিলারা নিজেরাই একজন অন্যজনের কাছ থেকে দেখে সহজে তা তৈরী করছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় চর লরেঞ্চ ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফ উল্যাহ বলেন, টুপি তৈরী করে এ এলাকার অসংখ্য নারী তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে। মেঘনা বহুমুখি উন্নয়ন সংস্থা দুস্থ ও হতদরিদ্র নারীদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘চরাঞ্চলের দুস্থ ও হতদরিদ্র নারীরা চমৎকার ডিজাইনের তৈরি টুপি দেশে বিভিন্ন এলাকায় ও দেশের বাইরে যাচ্ছে। নারীরা সাবলম্বী হচ্ছে এটা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’
॥ মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ॥
লক্ষ্মীপুর, ২৭ জানুয়ারি (বাসস) :

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Police Tel No.

Footer1

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা