কেএফসি, পিৎজা হাট কী খাওয়াচ্ছে?

* ভেজালের কারণে মামলা হয়েছে পিৎজা হাটের বিরুদ্ধে
* কেএফসির জরিমানা অপরিচ্ছন্নতার কারণে
* চিকেনের সঙ্গে পাওয়া যায় তেলাপোকা

 
জনস্বাস্থ্য বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ গবেষক কালের কণ্ঠকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, 'বাংলাদেশের অধিকাংশ খাবার ও খাবার প্রস্তুত প্রণালির মধ্যে ভেজাল আছে। তবে কেএফসি, পিৎজা হাটের মতো বড় বড় কম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয় না বললেই চলে। কারণ এসব কম্পানি বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের পরিদর্শকদের মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে হাত করে রাখে। যা দু-একটা স্যাম্পল আসে, তা পরীক্ষায় ভেজাল আর ধরা পড়ে না। কারণ যাঁরা পরীক্ষা করেন, সেসব কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের ঘুষ খেয়ে রিপোর্ট দেন।'By kaler Kantho News Paper
বাংলাদেশে কেএফসি (কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন) ও পিৎজা হাট পরিচালনাকারীরা আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে পারছে না। এ দেশে কেএফসি ও পিৎজা হাটের শাখাগুলোর বিরুদ্ধে অপরিচ্ছন্নতা ও ভেজাল খাদ্য ব্যবহারের অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি খাদ্যের মান নিয়ে একাধিক মামলা ও জরিমানা গুনেছে এ দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী ট্রান্সকম ফুড লিমিটেড। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বব্যাপী এ প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশে ট্রান্সকম ফুড লিমিটেড কতটা যত্নশীল। কেএফসি ও পিৎজা হাট ব্র্যান্ড দেখে যাঁরা সেখানে খেতে যাচ্ছেন, সেই ক্রেতারাও বিশ্বমানের সেবা পাচ্ছেন না। কিন্তু পকেট থেকে ঠিকই বেরিয়ে যাচ্ছে গাদা গাদা টাকা। বিশ্বব্যাপী কেএফসি ও পিৎজা হাট কঠিন মান নিয়ন্ত্রণ করে চলে বলে ভোক্তাদের মধ্যে এ দুটি খাদ্য ব্র্যান্ড খুবই জনপ্রিয়। কেএফসি ও পিৎজা হাটের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য মতে, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোনো রকম হাতের ছোঁয়া ছাড়াই এখানে খাদ্য প্রস্তুত করা হয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেসব নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এ দুটি ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।
কেএফসির মান ধরে রাখতে না পারায় বিশ্বখ্যাত এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা ও মামলা দায়ের হয়েছে বাংলাদেশে। সূত্র জানায়, এর আগে গুলশান-১-এর পিৎজা হাট থেকে সংগৃহীত সস পরীক্ষায় ভেজাল শনাক্ত হয়। সসে ভেজাল থাকার কারণে পিৎজা হাট, বাংলাদেশের মালিক তথা ট্রান্সকম ফুডের স্বত্বাধিকারী লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ সংশোধিত ২০০৫-এর ৬(১) ৪৪ মামলা হয়। মামলা নম্বর ২৯৫/২০০৯। ভেজাল খাদ্যের কারণে শুধু লতিফুর রহমান নয়, মামলা হয় ওই শাখার ব্যবস্থাপক মো. নুর আলমের বিরুদ্ধেও।
পিৎজা হাটের বিরুদ্ধে ভেজালের কারণে মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ব্যবস্থাপক আক্কু চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।'
নিম্ন আদালতের এ মামলার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর মিস কেস দায়ের করা হয়। হাইকোর্ট থেকে চার মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন আসামি লতিফুর রহমান। তবে আরেক আসামি ব্যবস্থাপক মো. নুর আলম নিম্ন আদালত থেকে জামিন নেন।
পরে হাইকোর্ট সেই মিস কেস খারিজ করে দিলে লতিফুর রহমান অন্য একটি বেঞ্চে আরেকটি মিস কেস করেন। বর্তমানে এটি বিচারাধীন।
একই মালিকের অপর বিখ্যাত ফাস্টফুড ব্র্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের কেএফসিও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মান মেনে চলতে পারছে না। গত ১২ নভেম্বর কেএফসির বাংলাদেশ চেইনের ঢাকার পল্টন আউটলেটে ফ্রায়েড চিকেনের মধ্যে তেলাপোকা পাওয়া যায়। ঘটনা পল্টন থানা পর্যন্ত গড়ায়। পরে কেএফসি ভুল স্বীকার করে।
শুধু তা-ই নয়, অপরিচ্ছন্নতার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোটা অঙ্কের জরিমানাও দিয়েছে কেএফসি কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৭ মার্চ ভ্রাম্যমাণ আদালত অপরিচ্ছন্নতার কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন প্রতিষ্ঠানটিকে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিনের নেতৃত্বে একটি টিম কেএফসিতে গিয়ে দেখতে পায়, অপরিষ্কার হাতে একজন কর্মচারী চিকেন স্ট্রিপস (মুরগির মাংসে তৈরি এক ধরনের খাবার) তৈরি করছেন। অথচ তাঁকে জীবাণুমুক্ত হাতমোজা (হ্যান্ড গ্লাভস) পরে কাজ করার কথা। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালতের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে কেএফসির এমডি আক্কু চৌধুরী কালের কণ্ঠকে গত ১২ জানুয়ারি ফোনে বলেন, 'আমরা পরিষ্কারের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকি। আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখি।' তাহলে আপনাদের প্রতিষ্ঠানকে কেন অপরিচ্ছন্নতার কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত_এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আপনার ঘরও সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা যায় না। এটা সম্ভব নয়। সেখানে মাছি ঢুকে পড়বে।'
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) একটি সূত্র জানায়, কেএফসি যে ধরনের খাবার তৈরি করে, তা বিএসটিআই নির্ধারিত ১৫৩টি পণ্যের আওতার বাইরে। তাই কেএফসির খাবার কতটা মানসম্পন্ন, তা বিএসটিআইয়ের জানা নেই।

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Police Tel No.

Footer1

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা