নদী দখল করে পুকুর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

খুলনার রূপসা উপজেলার নন্দনপুর থেকে সামন্তসেনা এলাকায় আঠারোবাঁকী নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে ৬০টি ইটভাটা। এর মধ্যে অধিকাংশ ভাটা খাসজমি দখল করে এবং ফসলি জমি ইজারা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সামন্তসেনা এলাকার বেশ কয়েকটি ইটভাটায় নদীর পাড় ও রাস্তার পাশের মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ ভাটায় কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট।
অথচ সরকার আইন করে নদীর তলদেশ থেকে মাটি কাটা এবং ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছে। মাটি তোলার বিষয়ে বালুমহাল ইজারা প্রদান ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বিধান প্রণয়নের জন্য প্রণীত আইন-২০১০-এর ৪-এর গ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, বালু বা মাটি তোলার উদ্দেশে ড্রেজিংয়ের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হলে মাটি তোলা যাবে না।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সামন্তসেনা এলাকায় অনুমোদিত ভাটার সংখ্যা ৪২টি। কিন্তু এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এখানে ভাটার সংখ্যা অন্তত ৬০টি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রব হাওলাদার বলেন, নদীর কূল ঘেঁষে কখনো ইটভাটা তৈরি করা উচিত নয়। এতে নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলে এবং আশপাশের খাসজমি দখল হয়ে যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য মাটি পাকা রাস্তার দুই পাশ ও ফসলি জমি এবং নদীর তীর থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ‘আজাদ ব্রিকস’ নামের একটি ভাটার লোকজন শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে নদীর মধ্যে ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে ২০-২৫ ফুট ভেতরে গিয়ে কয়েকটি পুকুর নির্মাণ করেছে। এতে নদী নাব্যতা হারাচ্ছে। অন্যদিকে পালেরহাট থেকে আলাইপুর পর্যন্ত সড়কটির ডোমরা এলাকায় রাস্তার পাশে ছয়-সাতটি গর্ত করা হয়েছে। এই গর্তগুলোতে জোয়ারের সময় পানি তোলার ফলে এর পাশের পাকা রাস্তা ভাঙনের হুমকির মুখে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর পাশে শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আজাদ ব্রিকসের লোকজন নদীর দেড় থেকে দুই হাত দূরে চারটি বড় বড় পুকুর কেটেছে। এগুলো থেকে মাটি সংগ্রহ করে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এভাবে মাটি সংগ্রহ করায় ওই এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। আজাদ ব্রিকসের এসব পুকুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে। মাটি কাটার জন্য সেলিম ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার লোকজন ডোমরা গ্রামে পাকা রাস্তার পাশে বড় বড় পাঁচটি গর্ত করেছে।
সেলিম ব্রিকসের লোকজনের সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। আজাদ ব্রিকসের মালিক ইছাক সরদার নদীর মধ্যে পুকুর করে মাটি কাটার কথা অস্বীকার করে বলেন, যেখাটে পুকুর করা হয়েছে, সে জমি তাঁর। তিনি তাঁর জমি থেকে মাটি কাটছেন। তিনি আরও বলেন, নদীর তীর ঘেঁষে যেসব জমিতে পুকুর করা হয়েছে, সেসব জমির কিছু অংশ তিনি কিনেছেন এবং কিছু অংশ ইজারা নিয়েছেন।
সেনহাটি গ্রামের মো. মনির বলেন, সেমহাটি-আলাইপুর পাকা সড়কের পাশে বড় বড় গর্ত কাটার ফলে সড়কটি হুমকির মুখে পড়ছে।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তিন সদস্যের একটি জরিপ কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এতে কে কতটা খাসজমি দখল করেছে, তা জানার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ের উপপরিচালক তরুণ কান্তি শিকদার জানান, সামন্তসেনা নদীর মাটি কাটা ও কাঠ পোড়ানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এগুলো বন্ধ করার জন্য তাঁরা মাঝেমধ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালান।

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Police Tel No.

Footer1

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা