আফরিনের জন্য ভালোবাসা

আফরিন সুলতানা

আফরিন সুলতানাভালোবেসে কেউ কাঁদেন, কেউ হাসেন শান্তির হাসি; আর কেউবা ভালোবেসে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। অনেক দূর থেকে ভালোবেসে কারও জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েও কেউ কেউ পেতে চান পরম প্রশান্তি। এসবই ভিন্ন ভিন্নভাবে একই ভালোবাসার রূপ। আর ভিন্ন ভিন্নভাবে এগুলো আছে বলেই কেউ কেউ এখনো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। শরীরে ভয়ানক ব্যাধি নিয়ে এখনো চিকিত্সক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আমাদের, হ্যাঁ আমাদেরই আফরিন সুলতানা।

আজ শনিবার প্রথম আলোতে ‘মেধাবী এই মেয়েটিকে কেউ বাঁচাবে?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনের শুরুতে লেখা হয়, ‘আমার মাইয়াডার স্বপ্ন আছেলে ডাক্তার অইবে। দেশের ও মানুষের সেবা করবে। অর হেই আশাডা বুঝি পূরণ অইবে না? আমনেরা আমার মাইয়াডারে বাঁচান’—এই আকুতি জানিয়ে একমাত্র মেয়ে আফরিন সুলতানার চিকিত্সার খরচ জোগাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় বাবা মো. বাবুল তালুকদার।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার শান্তিবাগ এলাকার মেয়ে আফরিন। সেপটিসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে যকৃত্, ফুসফুস ও কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে তাঁর। ২০০৯ সালে এসএসসি ও ২০১১ সালে এইচএসসি (বিজ্ঞান বিভাগ) পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাসসহ জিপিএ-৫ অর্জন করেন। চলতি বছর মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এরই মাঝে গত ১৬ জুন তাঁর শরীরে বাসা বাঁধা ব্যাধিটি শনাক্ত করেন চিকিত্সক। এ অবস্থায় ভালোবাসার একমাত্র মেয়েকে বাঁচাতে মরিয়া অসহায় বাবা ১৫ লাখ টাকা জোগাড় করার জন্য ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। আর এদিকে, আফরিনকে বাঁচাতেই তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ঠিকানা পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন প্রথম আলোর অগণিত পাঠক।
হ্যাঁ, আজ প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে সবচেয়ে আলোচিত সংবাদগুলোর মধ্যে আফরিনকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদনটি ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। সেখানে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। সবাই আফরিনের চিকিত্সার জন্য, মেধাবী একটি মুখকে বাঁচানোর জন্য সাহায্যের হাত বাড়াতে চান। কিন্তু এ জন্য দরকার আফরিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা। যে বিষয়টি প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল না। এ কারণে অনেক পাঠক ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন প্রথম আলোর কাছে।
লন্ডন থেকে আল মামুন সরকার নামে প্রথম আলোর এক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘কীভাবে আমি লন্ডন থেকে টাকা পাঠাতে পারি? কোনো অ্যাকাউন্ট নম্বর দয়া করে পেতে পারি?’ সেই লন্ডন থেকেই কিন্তু মেধাবী ওই আফরিনের জন্য কেঁদে উঠেছে তাঁর মন। শুধু টাকার জন্য একটি প্রাণ এভাবে চলে যেতে পারে না, তা কিন্তু আমরা মানুষই বুঝতে পারি; সেটা দূর কিংবা কাছে থাকার ওপর নির্ভর করেনি এখানে।
সুব্রত চক্রবর্তী, কামরুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন পাঠক মন্তব্যে প্রস্তাব করেছেন, প্রথম আলো যেন উদ্যোগ নিয়ে আফরিনের জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়। সেই অ্যাকাউন্টের জমানো টাকা ব্যয় করা হবে আফরিনের চিকিত্সার জন্য।
বাপি দে নামে কলকাতার একজন পাঠকও টাকা পাঠানোর জন্য অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রকাশে অনুরোধ করেছেন।
প্রতিবেদনে অ্যাকাউন্ট নম্বর ছিল না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে আমজাদ হোসাইন নামে এক পাঠক লিখেছেন, ‘দায়িত্বহীন সংবাদ, ব্যাংকের হিসাব নম্বর, ঠিকানা, সুইফট নম্বর কিছুই নাই—তাহলে সাহায্যটা পাঠাবে কী করে?’ এই যে ক্ষোভ, এটাও তো ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের ক্ষোভকেও আমরা সম্মান জানাই। তাঁর সেই ক্ষোভ আমাদের হূদয়কেও নাড়া দিয়ে গেছে। যাবেই তো, কারণ অ্যাকাউন্ট নম্বরের অভাবে তিনি সাহায্যের অর্থ পাঠাতে পারেননি বলেই তো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই যে এত এত পাঠক মন্তব্য করছেন, অনেকের মন্তব্য এখনো প্রকাশের জন্য অপেক্ষাধীন। তাঁদের সবাই কিন্তু সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে চাইছেন। এত মানুষ যদি একসঙ্গে আমাদের সবার আফরিনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন, তাহলে বাবা বাবুল তালুকদারকে কাঁদতে হবে কেন? দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে কেন? রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আয়েশা মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মনের গহিনে পুষে রাখা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার কথা চিন্তা নিশ্চিন্তে করতেই পারেন আফরিন।
আফরিনকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: মো. শাহ আলম, হিসাব নম্বর: টি-১৪২৮, সোনালী ব্যাংক, কলাপাড়া বন্দর শাখা, পটুয়াখালী। এ ছাড়া সাহায্য পাঠাতে পারেন খন্দকার সাইফুল, হিসাব নম্বর: ৪০০৫১২১০০০৫৪৮১৫, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা, ঢাকা—এ ঠিকানাতেও।

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Police Tel No.

Footer1

দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা